হযরত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম – উনাদের ফযীলত (সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ উনার মাহফিল)

১২ ই শরীফ

১২ ই শরীফ

السلام عليكم و رحمة الله

    الحمد لله، الحمد لله نحمده و نستعين و نستغفره و نؤمن به و نتوكل عليه و نعوذ با لله من شرورأنفسنا و من سيئات أعمالنا من يهدى الله فلا فلا مضل له و من يضلله فلا هادي له و نشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له و نشهد أن سيدنا و نبينا و شفيعنا و حبيبنا و مولانا محمدا صلى الله عليه و سلم أما بعد، فأعوذ با لله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم إن الله و ملائكته يصلون على النبى يا أيها الذين آمنوا صلوا عليه و سلموا تسليما أللهم صل على سيدنا و نبينا شفيعنا حبيبنا و مولانا  وسيلتى إليك و آله و سلم و على أرشد أولاده شيخنا و     مرشدنا عليه السلام و على أهل بيته عليهم السلام–

মামদুহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিত আহলে বায়ত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কদম পাকে ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ ও  দয়া ইহসান আর্জু করে আমি আলোচনা শুরু করছি । আমার আলোচনার বিষয়বস্তুু হচ্ছে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম-উনাদের ফাযায়েল ফযীলত। বিষয়টির গুরুত্ব হিসাবে ইতিপূর্বেও অনেক বার আলোচিত হয়েছে ।

home

উম্মুল মু‘মিনীন অর্থ হচ্ছে মু‘মিনদের মাতা, আর উম্মুহাতুল মু’মিনীন অর্থ হচ্ছে মু’মিনদের মাতাগণ। হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে :   إن الجنة تحت أقدام أمهاتكم(অর্থাৎ নিশ্চয়ই জান্নাত হচ্ছে তোমাদের মায়ের ক্বদমের নীচে). এই হাদীছ শরীফ থেকেই বুঝা যায় মাতার সম্মান কিরূপ।  মু’মিনদের মাতা বলতে  আজওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র আহলিয়াগণ উনাদেরকে বুঝায়।

উম্মুহাতুল মু’মিনীনগণ উনারা সংখ্যায়  ১৩ জন ছিলেন ।  তম্মধ্যে ৮ জন ছিলেন কুরাইশ গোত্রের : (১) হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম, (২) হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম, (৩) হযরত উ¤েম সালামা আলাইহাস সালাম, (৪) হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম, (৫) হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম, (৬) হযরত উ¤েম হাবিবাহ আলাইহাস সালাম, (৭) হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম, (৮) হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম ।  দুই জন ছিলেন অন্যান্য আরব গোত্রের : (৯) হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মা আলাইহাস সালাম, বনু হিলাল গোত্রের (১০) হযরত জুওয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম, বনু মুছতালিক গোত্রের।   দুইজন ছিলেন ইয়াহুদী স¤প্রদায় থেকে : (১১) হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম, (১২) হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম।  আর একজন ছিলেন ঈসায়ী স¤প্রদায় থেকে : (১৩)  হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম ।

মূল বিষয় উনাদের ফাযায়েল ফযীলত আলোচনার পূর্বে উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম-উনাদের সংখ্যাধিক্যতার বিষয়ে আলোচনা করছি। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়কেই আমাদের সাধারণ মানবীয় ধ্যান ধারণা অনুযায়ী বিবেচনা করা যাবে না ।  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো ছিলেন বেমেছাল, আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার শান। সাধারণ উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক নির্দ্ধারণ করে দিয়েছেন শর্ত ও ক্ষমতা অনুসারে উর্দ্ধে ৪ জন আহলিয়া রাখা যাবে। খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনাকে তিনি এই নির্দ্ধারিত সীমার উর্দ্ধে আহলিয়া গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, যা কালাম পাকে উল্লেখ রয়েছে। সাধারণ অন্যান্য নবী-রসুলদেরও অনেক খাছ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষ থেকে ভিন্ন । যেমন পূর্ববর্তি নবীদের মধ্যে দেখা যায় হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ১০০ জন আহলিয়া ছিলেন। হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার ৭০০ আহলিয়া এবং ৩০০ বাঁদী ছিলেন এবং উনার সর্বশেষ আহলিয়া ছিলেন হযরত বিলকিস আলাইহাস সালাম। এই সংখ্যাধিক্যতা নবীদের মু’জিযার অন্তর্ভূক্ত । খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের এত অধিক সংখ্যক আহলিয়া রাখার জন্য ইখতিয়ার দিয়েছিলেন এবং এর শক্তি-সামর্থও দিয়েছিলেন।  সকল নবীগণই মা’ছুম, উনারা সর্বাবস্থায় নফসানী খাহেশাতের উর্দ্ধে। উনারা ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও মর্জির খেলাফ কোন কাজ করেন না । হযরত শাহ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত মাদারিজুন নবুওওত কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতী ৪০ জন পুরুষের শক্তি দেয়া হয়েছিল । তিনি বলেন:  এ সম্পর্কে আরো সুস্পষ্ট বর্ণনা এ রকম এসেছে যে, জান্নাতী একজন পুরুষ দুনিয়ার একশত পুরুষের সমান শক্তির অধিকারী হবে । অপর এক বর্ণনায় এসেছে, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন : একবার হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম খাবার ভর্তি একটি ডেগ আমার নিকট নিয়ে আসলেন । আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম । তাতে আমার ভিতরে ৪০জন পুরুষের সমান পুরুষত্বশক্তি এসে গেল (মাদারিজুন নবুওওত)।

এখন উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, সাধারণ মানুষ যুবক বয়সে  একজন যুবতী স্ত্রী পছন্দ করে থাকে । কিন্তু আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তদ্রুপ করেন নি। উনার যখন প্রথম নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় তখন উনার বয়স মুবারক ছিল ২৫ বছর, আর উনার প্রথমা আহলিয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিল ৪০ বছরের উর্দ্ধে। উনার জীবিত অবস্থায় তিনি অন্য কোন আহলিয়া গ্রহণ করেন নি । উনার বিছাল শরীফের পরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বয়স মুবারক যখন ৫০ বছরের উর্দ্ধে তখন ৫২ বছর বয়স্কা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাওদা আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়।  এ সময় উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম-উনার সঙ্গেও খালিক্ব, মালিক, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশক্রমে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্দেশ সম্পর্কে উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক আলোচনায় আমরা পরে আলোচনা করব। সে সময় উনার বয়স মুবারক ছিল মাত্র ৬ বছর। মক্কা শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ২৮ বছর বৈবাহিক হায়াত মুবারকের মধ্যে যদিও এই তিনটি নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়, এ সময় শুধু একজন আহলিয়া উনার সঙ্গে ছিলেন অর্থাৎ হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফের পরে হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম।  হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে আরো ৩ বছর পর মদীনা শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে আজওয়াজে মুত্বাহহারাত উনাদের অন্তর্ভূক্ত হন ।

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে উনার ১০ বছর হায়াত মুবারকের শেষের দিকে, উনার বয়স মুবারক যখন ৫৮ থেকে ৬০ বছর, তখন বাকী দশটি নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় । এই দশ জন উম্মুহাতুল মু’মিনীন উনাদের মধ্যে একমাত্র হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম ব্যতীত সকলই ছিলেন বিধবা। হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম, যিনি ছিলেন ঈসায়ী স¤প্রদায়ের, উনাকে মিসরের শাসনকর্তা মুকাওকিস হাদিয়া হিসাবে পাঠিয়েছিলেন।  এই নিকাহ মুবারক সমূহ করা হয়েছিল বিশেষ বিশেষ কারণ ও উদ্দেশ্যে এবং খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে, এতে দুনিয়াবী কোন লোভ লালসা ছিল না।

নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মুবারকের শেষ  সময়টি ছিল সামাজিকভাবে অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ, ঘন ঘন সারিয়া জিহাদের কারণে অনেক মুসলমান রমণী স্বামী হারা, পিতৃ হারা ইয়াতীম হয়ে পড়েন । পক্ষান্তরে বিজয় অভিযানের কারণে বহু বিধর্মী মহিলা বন্দীনী গণীমত হিসাবে মুসলমানদের হস্তগত হয় । তৎকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আরবে বহু-বিবাহের প্রচলন ছিল। ইসলামের প্রারম্ভে অনেকের ৮/১০ জন স্ত্রী ছিল । তম্মধ্যে ইসলামী আইন অনুযায়ী ৪ জন রেখে বাকী স্ত্রীদের তালাক দিতে হয়েছে।  সাধারণত: বিধবা বিবাহ করা  একটা বিরাট ঝামেলার ব্যাপার, উনারা বয়স্কা হয়ে থাকেন এবং উনাদের সন্তান সন্ততি থেকে থাকেন, উনাদের ভরণ পোষণের ব্যাপার রয়েছে । এমতাবস্থায় সর্ব-প্রথম আল্লাহ পাক উনার হাবীব বিধবাদের আশ্রয় দিয়ে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রতি উৎসাহ দেখিয়েছেন, নতুবা তখনকার পরিস্থিতিতে এক বিরাট সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিত ।

কুরআন শরীফে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক একাধিক বিবাহ সংক্রান্ত যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, তাতে বুঝা যায় সাধারণত: এক বিবাহ হচ্ছে আদর্শ, আর একাধিক বিবাহ হচ্ছে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবং শর্ত সাপেক্ষে।  ফিকির করলে বুঝা যায়, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন মানব জাতির সর্ব বিষয়ে আদর্শ। মক্কা শরীফে উনার ৫৩ বছর হায়াত মুবারকে ২৮ বছর বৈবাহিক হায়াত মুবারক ছিল এক বিবাহের আদর্শ এবং মদীনা শরীফে উনার হায়াত মুবারকের শেষ ১০ বছর ছিল বহু বিবাহের আদর্শ। কারণ একাধিক আহলিয়ার সঙ্গে কি ভাবে জীবন যাপন করতে হয়, তারও আদর্শ তিনি রেখেছেন। এ ছাড়াও এর মধ্যে আমাদের ধারণার উর্দ্ধে আরো অনেক হিকমত রয়েছে, যা খালিক্ব, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি ভাল জানেন।

Leave a comment